লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদএকজন মহিলা প্র্যাগ্নেন্ট হবার পর থেকে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগ পর্যন্ত কি পরিমাণ মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যান আপনার আমার সেই ধারণা আছে? আমরা সবাই একটা গান জানি। “দশ মাস দশ দিন তোর (মায়ের) গর্ভে ধারণ “। আসলে কি আমরা মায়ের পেটে দশ মাস দশ দিন থাকি? উত্তর না। কোন মহিলার মাসিক বন্ধ হবার, আরও স্পেশিফিকভাবে বলতে গেলে বাচ্চা কনসিভ করার পর বাচ্চা জন্ম দেওয়া অব্দি সময়কাল ৯ মাস +- ৭ দিন। ৭ দিন আগেও হতে পারে আবার পরেও হতে পারে। এই দীর্ঘ সময় একটা মা কতটা কষ্ট সহ্য করে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। শুধুমাত্র তারাই এটা অনুভব করতে পারবেন যারা কখনো মা হয়েছেন। গর্ভধারণের পর থেকেই একজন মায়ের নিয়মিত এন্টি নেটাল চেক আপ, পুষ্টিকর খাবার দাবার করার প্রতি জোর দেওয়া হয়। আমরা কজন তা দিতে পারি? গ্রামের অনেক মহিলাই আছেন যারা বাচ্চা পেটে নিয়েও অনেক ভারী কাজ করেছেন, করতে হয়। আর তাছাড়া সাংসারিক কলহ, বউ শ্বাশুড়ির মনোমালিন্য, সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে এসব নিয়ে পছন্দ/ অপছন্দ, ঝামেলা তো আছেই। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর মা বাচ্চার খেয়াল নিচ্ছে না, কেমন যেনো মনমরা হয়ে আছেন, মেজাজ খিটখিটে থাকে তার। ঘন ঘন মুড সুইং হয়। অনেক সময় মায়ের মনে হয়, এই বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়েই আমার এত কষ্ট করতে হয়েছে, এ বাচ্চা আমি রাখবো না, একে মেরে ফেলবো। তাদের মানসিক যন্ত্রনা আমরা কেউ বুঝতে চাই না। যদি সেই মহিলা ব্যাপারগুলো শ্বাশুড়ির সাথে শেয়ার করেন তিনি উত্তরে বলবেন, ” আমরা মনে হয় বাচ্চা জন্ম দেই নি?” স্বামীকে বললে বলবে, “এমনিতেই ব্যবসা/ অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি, তার উপর এসব ঢং কইরো না তো”! আমরা আসলেই কেউ সেই মায়ের মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করি না
অনেক মা আছেন যাদের এমন মনে হয় কিন্তু কাউকে বলতে পারেন না। আবার অনেকে আছেন তাদের সন্তানের প্রতি ওভার সেনসিটিভ। কাউকেই দেন না বাচ্চাকে টাচ করতে। কেউ বাচ্চার জন্য পোশাক, খেলনা নিয়ে আসলে উনি সন্দেহ করেন। ভাবেন, হয়তো বাচ্চার ক্ষতি করবে। যখন এই ধরনের মানসিক অস্থিরতা আর সহ্য করতে পারেন না তখন অনেকে বাচ্চাকে মেরে ফেলেন, নয়তো নিজেই আত্নহত্যা করেন, নয়তো স্বামীকে মেরে ফেলেন। এসব কিছুই হয় মূলত হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য। আর এই মানসিক রোগের নাম হলো ” পোস্ট পারটাম সাইকোসিস / পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন “। উনাদের দরকার পরিবারের সাপোর্ট, কেয়ার। আমেরিকান মহিলা আন্দ্রিয়া ইয়েটস। একদিন স্বামীকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলেন। স্বামী বাসায় এসে যা দেখলেন তা কেউই কল্পনা করতে পারে নি। আন্দ্রিয়ার পাঁচটা সন্তান ছিলো। সে একে একে সবাইকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলে। তার যখন দুটো বাচ্চা হয় তখনই তার এরকম সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সে চাইতো বাচ্চা মেরে ফেলতে। উনার স্বামী উনাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখান। দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়ার পর উনি কিছুটা স্বাভাবিক হন। তখন উনার স্বামী ভাবলেন হয়তো আবার বাচ্চা নিলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিণতি দেখা গেলো উল্টো। সবাইকে খুন করে ফেলেছে সে। পুরো আমেরিকা তখন আন্দ্রিয়ার ফাঁসির দাবি করে। কিন্তু তখনও তার স্বামী তার পাশে দাঁড়ায়। সবাইকে বলে আন্দ্রিয়া মানসিকভাবে অসুস্থ। সবাই ভাবতে লাগলেন হয়ত এতে স্বামীরও হাত আছে। দুজন মিলেই খুন করে বাচ্চাগুলোকে। তারপর ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা হলো। সবাই এই সিদ্ধান্তে এলো যে আন্দ্রিয়া পোস্ট পারটাম সাইকোসিস এ ভুগছে। তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। এরপর কি হয় তা আমার জানা নেই। যতদূর জানি আন্দ্রিয়ার স্বামী আবার বিয়ে করেন। সে ঘরে তার দুইটা বাচ্চা আছে। এখনও মাঝে মাঝে সে আন্দ্রিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যায়। পোস্ট পারটাম সাইকোসিস
লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ