লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ
ক্লিপ্টোম্যানিয়া অদ্ভুত এক মানসিক রোগ। ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিয়ে সহজ করে দেই।
ধরুন আপনি একটা শপিং কমপ্লেক্সে গেলেন। এক জোড়া জুতা কিংবা একটা ড্রেস আপনার খুব পছন্দ হলো। কিন্তু দাম আপনার মনমতো হয়নি। আপনার মনে হচ্ছে ওরা আপনাকে ঠকাতে চাচ্ছে। ইচ্ছে করেই বেশি দাম দিয়ে রাখছে। আপনি যদি কিনেন তাহলে অনেক লস হয়ে যাবে আপনার। আপনি তখন চিন্তা করলেন আপনার যেহেতু পছন্দ হয়েছেই আপনি এটা নিবেন ই। তখন কি করবেন? বাসা থেকে টাকা নিবেন নয়তো কারো থেকে ধার করে হলেও কিনবেন। নাকি আপনি চিন্তা করবেন, জামাটা আপনি চুরি করবেন? চক্ষুলজ্জা, ধরা পড়ার ভয় তো আছেই! আপনি নিশ্চয়ই চুরি করার কথা ভাববেন না।
কিন্তু ক্লিপ্টোম্যানিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের টাকা থাকুক বা না থাকুক তারা লোকলজ্জার ভয় এড়িয়ে সেটা চুরি করবেই। জিনিসটা তার পছন্দ হোক বা না হোক, তার এমন হাজার জিনিস /জামা থাকুক বা না থাকুক, তার প্রয়োজন হোক বা না হোক তারা সেটা চুরি করবেই। ধরা পড়লে মান সম্মান যাবে এমন চিন্তা তারা করে না। শুধু যে শপিং কমপ্লেক্সে গেলেই তাদের এমন মনে হয় তা কিন্তু নয়। হতে পারে ভাইয়ের টাকা, বোনের টাকা, পাশের বাসার মোবাইল যাই হোক তারা সেটা চুরি করবেই। আমি একটা মেয়েকে চিনি। যথেষ্ট বড়লোক। কোনকিছুরই অভাব নেই। তার একটা বদঅভ্যাস আছে। সে বান্ধবীর টাকা চুরি করে। তাকে বাসা থেকে অনেক বেশি টাকা দেয় যাতে সে চুরি না করে। তবুও সে চুরি করে। তার বাবা মা অনেক লজ্জায় পড়ে যান তখন। চুরি করাটা তাদের কাছে একটা নেশার মতো।
এই রোগে আক্রান্ত কয়েকজন বিখ্যাত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে জেনে নিই।
Kleptomania রোগটি সর্বপ্রথম ১৮১৬ সালে Impulse control disorder নামে বর্ণনা করা হয়। বিখ্যাত শিল্পী ব্রিটনি স্পিয়ার্স কিংবা অভিনেত্রী লিন্ডসে লোহানকে চিনেন? তারা দুজনেই এ রোগে আক্রান্ত। লিন্ডসে লোহান একবার ২৫০০ ডলারের একটি নেকলেস চুরির দায়ে ধরা পড়েছিলো। এছাড়াও এর আগে এবং পরে নানান দোকান থেকে জুতো, ড্রেস ইত্যাদি কয়েকবার সে চুরি করেছিলো। এর জন্য লিন্ডসে লোহান কে রিহ্যাব অব্দি যেতে হয়েছিলো। একবার তো অভিনেত্রী মেগান ফক্স মাত্র ৭ ডলারের একটি লিপ গ্লোস চুরির জন্য ধরা পড়েছিলো।
ব্যাপারটা তেমন বড় কিছু মনে না হলেও অবাক করার মত ব্যাপার হলো, পৃথিবীর ০.৬ শতাংশ মানুষ এই ক্লিপ্টোম্যানিয়া রোগে আক্রান্ত। আর এই ক্লিপ্টোম্যানিয়া রোগের জন্য প্রতিবছর প্রায় পৃথিবী জুড়ে ব্যবসায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। কি অদ্ভুত না?
লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ