লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ

ওথেলো সিনড্রোম’এক ধরনের মানসিক রোগ।

স্ত্রীর সতীত্বের প্রতি সন্দেহ থেকে এবং সেগুলো বিশ্বাস করাকেই ‘ওথেলো সিনড্রোম’ বলে। পুরুষরা এই রোগে বেশি ভোগেন। তবে অনেক মহিলার মধ্যেও ‘ওথেলো সিনড্রোম’ দেখা যায়। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের নাটক ‘ওথেলো’ থেকে এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে । ওথেলো সিনড্রোমের রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। নিজেকে সবসময় সুস্থ মনে করেন। ভাবেন উনিই ঠিক, উনার স্ত্রী ভুল। তারা তাদের স্ত্রীকে শারীরিক মানসিকভাবে অত্যাচার করা শুরু করেন। অনেকে স্ত্রীকে হত্যাও করে ফেলেন। আজকাল অবশ্য কোন একটা সম্পর্কে থাকাকালীনও বিশ্বাস- অবিশ্বাসের যাঁতাকলে পিস্ট হতে হয় অনেক প্রেমিক, প্রেমিকাকে। কারণে -অকারণে সন্দেহের তীর ছুড়ে মারা হয় অপরজনের দিকে। তবে এটা ওথেলা সিনড্রোম কিনা আমার ধারণা নেই!

বিদেশে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নারীহত্যা করার জন্য জেলে গেছেন এমন লোকের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই ‘ওথেলো সিনড্রোম’-এর রোগী। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা, সিজোফ্রেনিয়া, মদে আসক্তি প্রভৃতি। এ ছাড়া কিছু শারীরিক অসুখের কারণেও ‘ওথেলো সিনড্রোম’ হতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে টিউমার, এন্ডোক্রাইন ও বিপাক ক্রিয়ার ত্রুটি প্রভৃতি।

এই রোগের রোগীরা মনে করেন, তার স্ত্রী গোপনে অন্য পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। স্ত্রী যদি সামান্য সাজগোজ করেন, তাহলে রোগী মনে করেন গোপন প্রেমিকের জন্যই এই সাজগোজ। এ নিয়ে রোগী সবসময় চিন্তিত থাকেন। এক ধরনের ক্রোধ তার মধ্যে কাজ করে। সামান্য কথাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তার বন্ধুদেরও সন্দেহের চোখে দেখেন। তার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। খাবারের প্রতি অনীহা আসে। স্ত্রীর অসততা প্রমাণ করার জন্য গোপনে স্ত্রীর প্রতি নজর রাখেন। স্ত্রীর কাপড়-চোপড় গোপনে পরীক্ষা করেন। গোপনে স্ত্রীর ডায়েরি ও কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেন। স্ত্রীর নামে কোনো চিঠি এলে তা সরিয়ে ফেলেন। পড়ে দেখতে চান তা কার লেখা। অনেক সময় স্ত্রীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য লোক নিয়োগ করেন। বাসায় ফোন থাকলে মাঝে মধ্যেই ফোন করে দেখেন স্ত্রী বাসাতেই আছে কি-না। ফোন এনগেজড থাকলে তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়। রোগীর মধ্যে প্রচুর ঈর্ষার জন্ম নেয়। কথায় কথায় স্ত্রীকে মারধর করেন। রোগীর নিজের মধ্যে কোনো সততার লক্ষণ থাকে না। তার নিজের যৌন অসততার প্রতিফলন তার স্ত্রীর মধ্যেই দেখেন। স্ত্রীর চারিত্রিক কল্পিত অসততার কথা আত্মীয়-স্বজনকে বলেন। পদে পদে স্ত্রীকে হেয় করতে চান। স্ত্রী অপমানিত হলে মনে মনে খুশি হন। স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করেন। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে চান। রোগী নিজেকে সবসময় অপূর্ণ মনে করেন। তার বিশ্বাস জন্মায় যে, স্ত্রী তার অর্জিত টাকা-পয়সা অবৈধ প্রণয়ের পেছনে খরচ করে তাকে নিঃস্ব করতে চায়। এসব চিন্তা করে তার স্ত্রীকে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। দুশ্চিন্তায় রোগীর স্বাস্থ্যহানি ঘটে। অনিদ্রা দেখা দেয়। মদে বা অন্য নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তানকে অবৈধ মনে করে তাকেও তিনি নির্যাতন করে থাকেন। স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি তার প্রচণ্ড ঘৃণা জমে উঠতে থাকে।
এই রোগীদের মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরী। এন্টি সাইকোটিক ড্রাগ অথবা বিহেভিয়ার থেরাপি খুব ভালো কাজ করে।
লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ
Share the Post:
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

Related Posts

ক্লিপ্টোম্যানিয়া

লেখকঃ জহিরুল হক জাবেদ ক্লিপ্টোম্যানিয়া অদ্ভুত এক মানসিক রোগ। ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিয়ে সহজ করে দেই। ধরুন আপনি একটা শপিং

Read More

প্রাণনাশী গুপ্ত ঘাতক

লেখকঃ মোসাব্বিরা রহমান মৌসুমী আপনার কি মাঝে মাঝেই খুব অসহ্য আর অসহায় মনে হয় নিজেকে? কিংবা একদমই ভাল লাগে না

Read More